STAY WITH US

header ads

করোনা ভাইরাস রচনা (PDF) এইচএসসি বাংলা ২য় পত্র

 করোনা ভাইরাস রচনা (PDF) এইচএসসি বাংলা ২য় পত্র




প্রবন্ধ রচনা: করোনা ভাইরাস

ভূমিকা: COVID-19 একটি সংক্রামক রোগ যা করোনাভাইরাসের নতুন উপাদান দ্বারা সৃষ্ট Corona থেকে CO, Virus থেকে VI এবং disease থেকে D নিয়ে এই রোগের নামকরণ করা হয়েছে করোনা এবং ভাইরাস দুটি শব্দই লাতিন ভাষা থেকে সংগৃহীত করোনা শব্দের অর্থ মুকুট বা Crown এবং ভাইরাস বলতে বোঝায় এক প্রকার অকোষীয় আণুবীক্ষণিক রোগ সৃষ্টিকারী বীজাণুকে যার আক্ষরিক অর্থ হল 'বিষ' ভাইরাসটির নাম করোনা হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল এর আকৃতি ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ পর্যবেক্ষিত এই ভাইরাসটির শরীরজুড়ে খাজকাটা অসংখ্য কন্টক এঁকে আপাতভাবে একটি মুকুটের আকার দেয় এই ভাইরাসটি ভাইরাসগোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্যদের তুলনায় আয়তনে বেশ খানিকটা বড় এটি ডায়ামিটারে .০৬ মাইক্রন থেকে .১৪ মাইক্রন বা গড়ে .১২৫ মাইক্রন পর্যন্ত হয়ে থাকে নোভেল করোনাভাইরাস রোগটি ২০১৯ সালের রোগ হিসাবে উলে- করা হয় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে ভাইরাসটি প্রাথমিকভাবে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে সংক্রামিত হয়

 

চরিত্র বিশ্লেষণ: করোনাভাইরাসের প্রকৃত রূপ সম্পর্কে জানার জন্য এর চরিত্রের সামগ্রিক বিশ্লেষণ একান্ত প্রয়োজনীয় করোনাভাইরাস পৃথিবীতে নতুন কোন রোগ নয় ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম মানুষের শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব চিহ্নিত হয় এরপর থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত মানুষের শরীরে রোগ বহনকারী প্রায় পাঁচ প্রকারের করোনাভাইরাস আবিষ্কৃত হয়

 

এই ভাইরাস মানুষের শরীরে বাসা বেঁধে মূলত শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষেত্রে বিশেষ জটিলতার সৃষ্টি করে কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের করোনাভাইরাস পুরানো করোনাভাইরাস থেকে বহুলাংশে পৃথক এবং সম্পূর্ণ নতুন প্রকৃতির যার ফলে প্রথম থেকেই একে চিহ্নিত করা হচ্ছে নোভেল করোনাভাইরাস নামে ২০১৯ সালের শেষ দিক থেকে চীনে এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা যায়

 

মিউকাস এর মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে এই ভাইরাসটি বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করে এক্ষেত্রেও প্রধান লক্ষ্য হয়ে থাকে মানুষের শ্বাসযন্ত্র অত্যন্ত ছোঁয়াচে এই ভাইরাসটি প্রধানত মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ ঘটায় নোভেল করোনা ভাইরাস ঘটিত রোগটিকে বিশেষজ্ঞরা চিহ্নিত করেছেন কোভিড-১৯ নামে

 

সংক্রমণ: বিশ্বব্যাপী এই করোনাভাইরাসটির সংক্রমণ এত ব্যপকভাবে বিস্তার করছে যে বিশ্বের বড় বড় শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোও এর প্রতিরোধে ব্যার্থ হচ্ছে কি কি ভাবে এই ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়তে পারে সে ব্যাপারে বড় বড় চিকিৎসক থেকে শুরু করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অব্দি কেউই এখনো সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে পারেননি তবে এই ভাইরাসটির সংক্রমণ বিশেষজ্ঞদের মতে চারটি পর্যায়ে বিভক্ত

 

প্রথমটি হল, এমন ধরনের মানুষ যারা বিশেষ একটি সংক্রমিত অঞ্চল থেকে সরাসরি সংক্রমিত হয়ে এসেছে দ্বিতীয় পর্যায়টি হল, যেখানে সরাসরিভাবে সংক্রমিত হওয়া সেই সব মানুষগুলো নিজেদের সংস্পর্শে আসা অন্যান্য মানুষদের শরীরে

 

 

 

ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটায় তৃতীয় পর্যায়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে এক বৃহত্তর অঞ্চল জুড়ে এই পর্যায়ে সংক্রমিত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে না আসা ব্যক্তিও তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে সংক্রমিত হয় এটি গোষ্ঠী সংক্রমণের পর্যায় হিসেবে পরিচিত চতুর্থ বা অন্তিম পর্যায়ে সংক্রমণ রাজ্য কিংবা দেশজুড়ে এক মহামারীর আকার ধারণ করে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এই চতুর্থ পর্যায়ে পৌঁছে গেলে ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক ছাড়া তাকে রোধ করা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে পড়ে

 

লক্ষণ চিকিৎসা: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা চিহ্নিত করেছেন মানুষের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার অভাবকে করোনা ব্যাধীর সংক্রমণের সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বারবার কাঁপুনি, পেশী ব্যথা, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা এবং স্বাদ বা গন্ধের অনুভূতি হ্রাস করোনাভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত বেশিরভাগ লোক শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যায় ভোগেন এবং বিশেষ চিকিত্সার প্রয়োজন ছাড়াই সুস্থ হয়ে ওঠেন উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট বা ফুসফুসের রোগ, ক্যান্সার বা ডায়াবেটিসসহ প্রবীণরা গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি দেখা যায়

 

আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে সৃষ্টি হওয়া জটিলতার উপসর্গ অনুসারে ওষুধ প্রয়োগ করে রোগীর শরীরকে এক্ষেত্রে বাইরে থেকে প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা দেওয়া হয় শরীর এই প্রতিরোধমূলক চিকিৎসার দ্বারা নিজেই নিজের ভিতর ধীরে ধীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি গড়ে তোলে এই প্রক্রিয়া চলাকালীন রোগীকে সম্পূর্ণভাবে আইসোলেশনে বা একাকী ঘরে থাকতে হয় যদিও সম্প্রতি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে যেতে পারে

 

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা: কোভিড-১৯ এর নির্দিষ্ট চিকিৎসা বলে কোন কিছু নেই উপসর্গ অনুযায়ী এর চিকিৎসা হয়ে থাকে তাই এই ভাইরাস থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হল ভ্যাক্সিনেশন বা টিকাকরণ এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ বিশেষজ্ঞদের মতে এই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বলতে প্রধানত মানুষে মানুষে সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রথাকে বোঝানো

হয়

 

এই নিয়মের পালনের নিমিত্তই বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলি দেশ বা নির্দিষ্ট সংক্রমিত অঞ্চল জুড়ে জারি করে লকডাউন তাছাড়া বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বারবার বিশেষ ধরনের মাস্কের ব্যবহার এবং হাত পরিষ্কার রাখার উদ্দেশ্যে ৭০% আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল দ্বারা তৈরি স্যানিটাইজার তথা সাবান ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন

এছাড়াও তারা জানিয়েছেন সংক্রমণ চলাকালীন বিশেষ প্রয়োজন এবং মাস্ক ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোনো সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে তা না হলে করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করা আদৌ সম্ভব হবে না

 

প্রতিষেধক: সমগ্র বিশ্বব্যাপী দীর্ঘ গবেষণার পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বা টিকা আবিষ্কারে সক্ষম হয়েছে সর্বপ্রথম যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল দীর্ঘ গবেষণার পর করোনাভাইরাসের একটি টিকা আবিষ্কার করে তার ট্রায়াল' শুরু করে এর পরবর্তীতে প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া চীন নিজের স্বদেশে আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করে দেয়

 

রাশিয়াতে সর্বপ্রথম এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের কন্যা আমাদের উপমহাদেশও ভ্যাকসিন আবিষ্কার এবং তার প্রয়োগের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকেনি ভারতের দুটি সংস্থা: সিরাম ইনস্টিটিউট এবং ভারত বায়োটেক দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ভারতে তৈরি দুটি ভ্যাকসিন নিয়ে আসে এর একটির নাম হলো কোভিশিল্ড এবং অপরটি ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাক্সিন প্রথমে পরীক্ষামুলকভাবে এর প্রয়োগ শুরু হয় এবং ট্রায়ালের পর্যায় সফলভাবে শেষ হবার পর ধাপে ধাপে ব্যাপকহারে জনমানসে টিকাকরণ শুরু হয়ে যায়

বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাব

 

প্রত্যক্ষ প্রভাব: বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারি প্রত্যক্ষ প্রভাবরূপে আমরা প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছি আমাদের চোখের সামনে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হচ্ছেন ঘন জনবসতি অঞ্চলে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি

 

এই আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন তাদের প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছেন অন্যদিকে অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে চিকিৎসা তথা পরিকাঠামোগত দুরাবস্থা ক্রমশ আরও প্রকট হচ্ছে এমনকি উন্নত দেশগুলোও বিপুল সংখ্যক রোগীদের পরিষেবা দানের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ঘাটতি থেকে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খবর আসছে মানুষ মারা যাচ্ছেন বিনা চিকিৎসায়

 

পরোক্ষ প্রভাব: এদিকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত লকডাউন এর ফলস্বরূপ ছোট মাঝারি বিভিন্ন ধরনের শিল্প অস্তিত্বসংকটের মুখে পড়েছে বৃহৎ শিল্প গুলিও মূলধনের অভাবে ধুঁকতে শুরু করেছে এগুলির সাথে যুক্ত অসংখ্য মানুষের জীবিকাও পড়েছে প্রশ্নের মুখে পৃথিবীজুড়ে বেকারত্ব অস্বাভাবিক রকমের বেড়ে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি পড়ে ছে সংকটের মুখে স্বাভাবিকভাবেই সমাজের বুকে থাবা বসাচ্ছে দারিদ্র, অনাহার, খাদ্যাভাব

 

সমাজের বৈষম্যমূলক চিত্রটা দিন দিন আরো বেশি প্রকট হচ্ছে এরই পাশাপাশি অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গিয়েছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রীর কালোবাজারী মাস্ক বা স্যানিটাইজারের মত প্রতিরোধমূলক উপকরণগুলো ছাড়াও অতি প্রয়োজনীয় টেস্টিং কিটের ক্ষেত্রেও শুরু হয়েছে দুর্নীতি অনির্দিষ্টকালব্যাপী লকডাউনের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দৈনন্দিন সামগ্রী না

 

পাওয়ার আশঙ্কায় মানুষের মধ্যে বাড়তে পণ্য মজুত করে রাখার প্রবণতা অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছে সরাসরি যার সুযোগ নিয়েছে কালোবাজারি মজুতদারেরা ফলতই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাওয়ার ঘটনাও চোখে পড়ছে

 

উপসংহার: সভ্যতা যখন নিজের গতিকে অপ্রতিরোধ্য বলে মনে করে, সৃষ্টি তখন সমগ্র সভ্যতাকে ক্ষণিকের জন্য স্তব্ধ করে দেয় একটি ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক ভাইরাস যেন আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে এই প্রবাদবাক্যের সত্যতাই প্রমাণ করে দিল আবারো আমরা দেখতে পেলাম সৃষ্টির কাছে আমরা ঠিক কতখানি অসহায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে করোনাভাইরাস পরবর্তী পৃথিবী আর আগের মতন থাকবে না রাজনৈতিক তথা আর্থসামাজিক দিক থেকে এই বিশ্বে হয়তো আমূল পরিবর্তন ঘটে যাবে মানুষের জীবন যাপনের ক্ষেত্রেও আসবে স্থায়ী পরিবর্তন তবে একথা সত্যি যে এই দুর্যোগের মেঘ কাটিয়ে উঠে আমরা খুব তাড়াতাড়ি আবার সুস্থ পৃথিবীতে শ্বাস নিতে পারব নতুন নিয়মের সেই পৃথিবীতে আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে সৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে সভ্যতার যাপনেই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা





Post a Comment

0 Comments